অনলাইন ডেস্ক | ২৬ মার্চ ২০২১ | ১:৪৬ অপরাহ্ণ
আজ ২৩ মার্চ. ঠিক একটি বছর আগে এই দিন ছিল আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন. করণার ভয়ে সবার মঙ্গলের কথা চিন্তা করে ব্যাবসার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম অজানার এক পথে. কি হতে যাচ্ছে, আমার, আমার পরিবারের, সহকর্মীদের, আত্মীয় স্বজনদের কি হবে, কি ভবিষ্যৎ, কিছুই জানা ছিল না. সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা. আবার দেখা হবে কিনা, কোম্পানি চলবে কিনা, আমি নিজে বাঁচবো কিনা- সবই অনিশ্চয়তা. মানুষিক ভাবে সম্পূর্ণ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত. চারিদিক আহাকার. সারা বিশ্বে আহাজারি. যদিও ইউরোপিয়ান/ আমেরিকানদের থেকে আমাদের অবস্থান ছিল অনেকাংশে ভালো.
তরী ঘড়ি করে গত বছর আজ ২৩ মার্চ সবার উদ্দেশ্যে ভিডিও বার্তা দিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে কোম্পানীর সমস্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো. Main server বন্ধ করা হলো. বড় কষ্ট- বোঝাতে পারবো না. শুরু হলো জীবনের অজানা নতুন অধ্যায়.
আমরা বন্ধ করার দুদিন পর সরকার সমস্ত দেশে লকডাউন জারি করে. দেশব্যাপী টান টান উত্তেজনা. তবে এ উত্তেজনা ব্যাবসার জন্য না. জীবন বাঁচানোর জন্য.
ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি.
আমরা কেউ কারোর সাথে দেখা করা বন্ধ করলাম. যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন. কেউ মারা গেলে যাই না. অসুস্থ হলে দেখা করি না. মসজিদে যাওয়া বন্ধ. প্রথমবারের মত ঈদের নামাজ ছেলেকে নিয়ে একা ঘরের মধ্যে পড়লাম. উপর তলা, নীচ তলা যাওয়া বন্ধ. মাঝে মধ্যে PPE পরে মার্কেটে যেতাম. কল্পনার বাইরে. ভাবতে ভয় হয়. ১৯৭১ সালের যুদ্ধ দেখেছি. কিঞ্চিৎ মনে পড়ে. তবে এ রকম ভয় পাইনি. প্রতিদিন খবর দেখি কত জন infected হলো, কত জনের মৃত্যু হলো. দেখতে দেখতে পাগল হওয়ার উপক্রম. টিভি দেখা বন্ধ করলাম.
এর মধ্যে ZOOM মিটিং শুরু হলো. সবাইকে সচল রাখার চেষ্টা. কিছু কিছু ট্রেনিং প্রোগ্রাম, ভবিষ্যত পরিক্পনা, ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা, গান গাওয়া চলতে থাকলো.
ইতিমধ্যে এপ্রিল মাস শুরু হয়েছে. সবার সংসার চালাতে হবে. বেতনের জন্য হালকা চাপ আসতে লাগলো. বাড়ী ভাড়ার চাপ. অ্যাকাউন্টে টাকা নাই. হটাৎ করে ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে পেলাম. এ এক আলাউদ্দিনের প্রদীপ পাওয়ার মত. মুহূর্তের মধ্যে বেতনের কিছু অংশ সবার অ্যাকাউন্টে পাঠালাম. আমার মনে আছে মারুফ রিস্ক নিয়ে আমার বাসায় এসে স্যালারি ডকুমেন্টে সাইন করে. তারপর অনলাইন টাকা ট্রান্সফার করা হয়. কিছুটা স্বস্তি পেলাম.
তবে বাড়ী ভাড়া দিতে পারেনি. কিছু কিছু অবুঝ বাড়িওলার চাপে তাদের কিছু টাকা পাঠালাম.
ঘরে বসে আছি. সময় কাটেনা. নামাজ শুরু করলাম. দাড়ি কাটা বন্ধ. দিনে অসংখ্যবার চা খাই, ওষুধ খাচ্ছি, মসল্লা দিয়ে ভাপার নিচ্ছি, হিন্দি অ্যাকশন মুভি দেখি, দৌড়ানো শুরু করি. কমবেশী সবাই তাই করে. আমরা সবাই অতিষ্ট.
মে মাস শুরু হলো. এবার কি ভাবে সংসার চলবে? আবার চিন্তা শুরু করলাম. ব্যাংক খালি. হটাৎ করে মাথায় এলো- দেশের ছোট ছোট থানা/ গ্রাম গঞ্জে ছোট ছোট দোকান অপরিকল্পিত ভাবে খোলা আছে. আদেশ দিলাম আমাদের সেলস স্টাফদের. তারা ঝাঁপিয়ে পড়লো. সবাই মিলে যে যেখানে যা পারে তাই বিক্রী শুরু করল. কিছু টাকা আসা শুরু হলো. এ সময় আমাদের সেলস স্টাফদের আন্তরিকতার কথা আমি ভুলবো না. তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ. তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে যা এখন বলতে চাই না. যাহোক বেতনের কিছু অংশ পরিশোধ করলাম. এটা আল্লাহর অশেষ রহমত. কল্পনার বাইরে. এ সময় একাউন্টস/ মানব সম্পদ বিভাগ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা আমি স্মরণ করি. সব কিছু কাল্পনিক মনে হচ্ছে. এখন লিখতে যেয়ে অনেক কথা মনে পড়ছে, অনেক লিখতে ইচ্ছে করছে- তবে পারছি না. অকল্পনীয়. আল্লাহ আমার প্রতি প্রচন্ড মেহেরবান.
ঘরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত. কিছুদিন মাজুখান এলাকাই ধান কাটা শুরু করলাম. ভোর রাতে কাপাসিয়া ২/৩ দিন করে থাকা শুরু করলাম. গাছ লাগানো শুরু হলো. এখন তোমরা অনেকেই তা দেখতে পারছো. এ সময় শাকিল যথেষ্ট পরিশ্রম করে.
এর মধ্যে রোজা শুরু হলো ২৪ এপ্রিল থেকে. সবার মনে অনেক অশান্তি- ব্যাবসার কি হবে? ঈদ ব্যাবসা আমাদের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ. রোজার শেষে আস্তে আস্তে সরকার ক্রমান্নয়ে মার্কেট খোলা শুরু করলো. অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে আমরাও শুরু করলাম. কম বেশী যা হয় তাতেই খুশী. দেওয়ালে পিঠ থেকে গেছে.
ঈদের পর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লাগলো. তবুও ঈদের ছুটিতে কাউকে বাড়ী যেতে বারণ করলাম. সবাই কথা রেখেছে. ঈদের পর পরই আমি ও আমার পরিবার করোনা আক্রান্ত হলাম. সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়লাম. প্রচন্ড ভয় পেলাম. কিছু দিনের মধ্যে মানুষিক ভাবে ঘুরে দাড়ালাম. চিন্তা করলাম কিছু একটা করতে হবে. বুঝতে পারলাম করোনার পর সস্তা মাল বিক্রী বাড়বে. তাই EVA কারখানা দেওয়ার পরিক্পনা করি. সবাই অনুপ্রেরণা দিল. জমি ভাড়া করলাম. বিল্ডিং শুরু করলাম. মেশিনের LC খুললাম. ব্যাংক সাপোর্ট দিল.
ইতিমধ্যে ফ্যাক্টরী ২৪ ঘণ্টা চালানো শুরু করলাম. যা থাকে কপালে. রহিদুল ও তার টিম ঝাঁপিয়ে পড়লো. কৃতকার্য হলাম. পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হোলো. বিক্রী বাড়লো. আল্লাহর রহমতে অনেকের তুলনাই অনেক অনেক ভালো আছি. ইনশাআল্লাহ আরো ভালো থাকবো. পিছনে তাকানোর সময় নাই. উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি.
আরো আরো অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু তোমাদের সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না. তাই সমাপ্তি টানছি.
আমার বয়স হোয়েছে. আর বেশী দিন কাজ করতে পারবো না. আগামী ২ বছর প্রচন্ড পরিশ্রম করে কোম্পানিকে একটি পর্যায়ে নিতে চাই যাতে করে এ কোম্পানীর সকলে সুন্দর জীবন যাপন করে. সবার সহযগিতা একান্ত কাম্য.
সবার মঙ্গল কামনা করি. তোমাদের আমি বড্ড বেশী ভালোবাসি.
বাংলাদেশ সময়: ১:৪৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১
24news.com.bd | Online Desk